উখিয়ায় স্ত্রীকে হত্যার পর আত্মহত্যা বলে চালিয়ে দেয়ার ঘটনার রহস্য উদঘাটন করেছে পুলিশ। এ ঘটনার সপ্তাহের ব্যবধানে জড়িত নিহত মহিলার স্বামী ও তার পরকীয়া প্রেমিকাকে আটক করা হয়েছে। ক্লুলেস ঘটনার রহস্য উদঘাটন করায় উখিয়া থানা ও ওসিকে কক্সবাজার জেলার শ্রেষ্ঠ মনোনীত করা হয়েছে।
গত ১৫ আগষ্ট সকাল ১১ টার দিকে উখিয়ার বঙ্গোপসাগরের মোহনা রেজুখালে ভাসমান অবস্থায় আয়েশা বেগম (২২) নামের এক নারীর রক্তাক্ত মৃতদেহ উদ্ধার করেছিল পুলিশ। নিহত মহিলা উখিয়ার জালিয়াপালং ইউনিয়নের উত্তর সোনারপাড়ার হাকিম আলীর মেয়ে ও জসিম উদ্দিনের স্ত্রী। এক সন্তানের জননী নিহত মহিলা ঐ রাত ৩ টার দিকে শ্বশুর বাড়ি থেকে কাউকে না জানিয়ে বের হয়ে পড়েছিল বলে আত্মীয় স্বজনরা প্রচার করেছিল।
উখিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শেখ মোহাম্মদ আলী বলেন, সুস্থ একজন মহিলা কোলের শিশুকে একা রেখে রাত ৩ টায় ঘর থেকে বেরিয়ে পড়বে এবং নিহত স্ত্রীর স্বামী লাশ নিতে থানায়ও আসেনি। বিষয়টি কেমন যেন রহস্যাবৃত মনে হচ্ছিল। যেহেতু এলাকার প্রায় সবাই বলে আসছিল আত্মহত্যা। এরপরও ক্লুলেস ঘটনার পিছনের রহস্য উদঘাটনে চেষ্টা চালাতে থাকি।
ওসি জানান, ভিকটিমের মা,শ্বাশুড় সবাই বিনা ময়না তদন্তে লাশ দাফনের আবেদন করেন।কিন্তু থানায় ভিকটিম এর স্বামী না আসাতে আমার সন্দেহ হওয়ায় কৌশলে স্বামী কে থানায় নিয়ে আসি। দীর্ঘ সময় তাকে জিজ্ঞাসাবাদের এক পর্যায়ে ভিকটিমের স্বামী জসিম উদ্দিন স্বীকার করে সে তার স্ত্রীকে নৌকা থেকে ধাক্কা মেরে রেজুখালে ফেলে দিয়ে হত্যা করেছে।
স্বীকারোক্তিতে জসিম উদ্দিন নিহত স্ত্রীর খালাতো বোনের সাথে তার পরকীয়া প্রেমের সম্পর্ক থাকার কথা জানায়। পরকীয়া প্রেমিকার প্ররোচনায় স্বামী ভিকটিম স্ত্রীকে হত্যা করিয়েছে বলে জানায়। সঙ্গীয় ফোর্সসহ কৌশলে আসামির প্রেমিকাকে গ্রেফতার করেন বলে ওসি জানান।
এ ঘটনায় নিহত মহিলার স্বামী ইতিমধ্যে আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করে। ঐরাতে মাছ ধরার নৌকায় থাকা প্রত্যক্ষদর্শী তিনজন রোহিঙ্গা শিশুও সাক্ষী হিসেবে আদালতে স্বীকারোক্তি মূলক জবানবন্দি প্রদান করেছে। গত আগষ্ট মাসে ওয়ারেন্ট তামিল, গুরুত্বপূর্ণ মামলার রহস্য উদঘাটন, ইয়াবা গডফাদার গ্রেফতার, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ এবং সার্বিক কার্যক্রমের ভিত্তিতে কক্সবাজার জেলার শ্রেষ্ঠ অফিসার ইনচার্জ ( ওসি) হিসেবে শেখ মোহাম্মদ আলীকে এবং শ্রেষ্ঠ থানা হিসেবে উখিয়া থানাকে মনোনীত করা হয়েছে।
জুলাই মাসেও একইভাবে তিনি ও উখিয়া থানা শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করেছিল। গত রোববার কক্সবাজার জেলার ক্রাইম কনফারেন্স এ ঘোষণা করা হয়। কনফারেন্সে জেলা পুলিশ সুপার , অতিরিক্ত পুলিশ সুপারগণ ছাড়াও জেলার প্রত্যেক থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) সহ উর্ধতন কর্মকর্তাবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
পরিকল্পিত হত্যার ঘটনার শিকার মহিলা একজন রোহিঙ্গা। কিন্তু সে একজন মানুষ। সে হিসেবে তার খুনিকে আইনের আওতায় আনতে পারায় অন্তত নিহতের বিদেহী আত্মা শান্তি পাবে বলে ঘটনার রহস্য উদঘাটনকারী উখিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শেখ মোহাম্মদ আলী জানান। নিহত মহিলার একটি দেড় বছরের কন্যা সন্তান রয়েছে।
পাঠকের মতামত